
ঢাকার পরিবেশ দূষণ মোকাবেলায় সরকার ২,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার আওতায় আগামী দুই বছরের মধ্যে ৪০০টি বৈদ্যুতিক (ইভি) বাস চালু করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (DTCA) এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান IDCOL।
বাসগুলো বেসরকারি অপারেটরদের লিজ দেওয়া হবে, যাদের নির্বাচন করা হবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে পূর্বাচল ও কাঁচপুরে দুটি চার্জিং ডিপো স্থাপন করা হবে এবং এই বাসগুলো ঢাকা শহরের দুই-তিনটি রুটে চলাচল করবে।
নীতিগত দুর্বলতায় শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শুধুমাত্র ইভি বাস কেনার মাধ্যমে পরিবেশগত সমস্যার সমাধান হবে না। শক্তিশালী নীতিমালা, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা ও শক্তিশালী চার্জিং অবকাঠামো ছাড়া এই প্রকল্পটিও ব্যর্থ হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শামসুল হক বলেন, “সরকার এখনো ডিজেলচালিত যানবাহনের উপরেই ভর্তুকি দিচ্ছে, যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়িকে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে।”
তিনি জানান, ডিজেল চালিত বাসে আমদানি শুল্ক ১৫–৩৭% হলেও, বৈদ্যুতিক বাসে শুল্ক ৫৮% এর বেশি। “এই অবস্থায় কোন উদ্যোক্তা ইভি বাস আনবেন?” – প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আগেও ব্যর্থ হয়েছে EV প্রকল্পগুলো
এর আগেও বাংলাদেশে ইভি চালুর একাধিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বাস র্যাপিড ট্রানজিট (BRT)-এ ইভি চালুর প্রকল্প ডিপো নকশার ত্রুটির কারণে বাতিল হয়। ভারত থেকে ১৫০টি বৈদ্যুতিক বাস আমদানির পরিকল্পনাও আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমানে BRTC মাত্র ১২টি ইভি বাস কেনার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় প্রস্তুতকারীরা প্রস্তুত, প্রণোদনার অপেক্ষায়
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মাসুদ কবির জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিভিন্ন হালকা বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেছে এবং দেশব্যাপী চার্জিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ধোঁয়ায় ঢাকা ঢাকা: বায়ুদূষণে শীর্ষে রাজধানী
বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের বাতাসে PM2.5 এর পরিমাণ WHO নির্দেশনার চেয়ে ১০–২০ গুণ বেশি। ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের কারণে ১.৬ লাখ অকাল মৃত্যু ও ২৫০ কোটি কর্মদিবস হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ৩৫৫ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট ২০২৫–২০৩০ সময়কালে বাস্তবায়িত হবে, যার মধ্যে ২৯০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
