
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো লিমিটেড জার্মানির ING ব্যাংক থেকে নেওয়া ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর রপ্তানি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।
এই বিষয়ে ING ব্যাংকের জার্মান শাখা বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-কে চিঠি দিয়ে ঋণ আদায়ে সহায়তা চেয়েছে। বিষয়টি ২০২৫ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ ম্যানসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈদেশিক ঋণ/সরবরাহকারীর ঋণ সংক্রান্ত স্ক্রুটিনি কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বেক্সিমকো যদি ঋণ পরিশোধ না করে, তাহলে বিডা জার্মান ঋণদাতাকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, বেক্সিমকো ৩৩ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ (Export Credit Agency) টার্ম লোন গ্রহণ করেছিল, কিন্তু মূল টাকা ও সুদের কোনও অংশই পরিশোধ করেনি। এই অবস্থায় ING ব্যাংক বিডা-কে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তার ফলাফল কী হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের মোট ঋণ ছিল প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা, যার অর্ধেক ছিল খেলাপি ঋণ। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
অন্যদিকে, দেশবন্ধু গ্রুপ চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক Ceskoslovenska obchodni banka থেকে নেওয়া ৪.১০ মিলিয়ন ইউরোর ইসিএ-কাভার্ড ক্রেডিট ঋণ পরিশোধ করেনি। দেশবন্ধু গ্রুপের অসহযোগিতার অভিযোগে চেক প্রজাতন্ত্রের দিল্লি দূতাবাস বিডা-কে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায়।
এই বিষয়ে স্ক্রুটিনি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিডা চেক ইকোনমিক গ্যারান্টি সংস্থা EGAP এবং দেশবন্ধু গ্রুপের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও একটি মীমাংসাপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার তার ছেলে ও ভাগ্নের নামে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে।
অন্যদিকে, দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
২০২৫ সালের ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ১৪টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকদের পাওনা টাকা সরকার থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। কেবল রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকেই বেক্সিমকোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৮,০০০ কোটি টাকা।
এই ঘটনার বিষয়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোন ও বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
