
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের উপর প্রস্তাবিত ৩৭% পারস্পরিক শুল্ক আরোপ না করে, তাহলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শূন্য শুল্ক সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনামের উপর ট্যারিফ ৪৬% থেকে ২০%-এ নামিয়ে আনার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, “আমাদের মার্কিন পণ্যে শুল্ক ছাড় দিতে আপত্তি নেই। ইতোমধ্যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান, এলএনজি এবং গমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে আমাদের বেসরকারি খাতও সে দেশ থেকে আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবে। এতে দেশের কোনো শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR)-কে জানিয়েছে যে, তারা কোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া আইন মেনে চলতে পারবে না। বাংলাদেশের অবস্থান, এটি WTO-এর নিয়ম অনুযায়ী হওয়া উচিত।
ভিয়েতনামের চেয়ে কম শুল্কের আশা
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (LDC) জন্য আলাদা শুল্ক হার নির্ধারণ করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ আশা করছে, তার ট্যারিফ হার ভিয়েতনামের তুলনায় কম হবে।
প্রসঙ্গত, ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক ট্যারিফ আরোপ করে এবং বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর ৩৭% পর্যন্ত শুল্ক প্রস্তাব করে। যদিও এই শুল্ক এখনো কার্যকর হয়নি এবং আগামী ৯ জুলাই শর্তসাপেক্ষে তা শেষ হতে যাচ্ছে।
বাণিজ্যসচিব জানান, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, আলোচনা চলমান থাকায় ৩৭% শুল্ক আরোপ করা হবে না।”
চুক্তি নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি
৩ জুলাই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি সমঝোতা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘অ্যানেক্সার’ (পরিশিষ্ট) ডকুমেন্ট পাঠাবে, যার ভিত্তিতে মূল আলোচনা শুরু হবে। তবে এখনো সেই অ্যানেক্সার বাংলাদেশ পায়নি, ফলে সচিবের যুক্তরাষ্ট্র সফর আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশির উদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খালিলুর রহমান। পরবর্তী বৈঠক ৯ বা ১০ জুলাই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন প্রস্তাবের কাঠামো নিয়ে ভিন্নমত
সাধারণত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে প্রথমে অ্যানেক্সার নিয়ে আলোচনা হয়, তারপর মূল চুক্তির শর্তাবলী। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্টো পথে আলোচনার সূচনা করেছে, যা বাংলাদেশের চলমান FTA বা PTA আলোচনার কাঠামো থেকে ভিন্ন।
