
কলকাতার নিউ মার্কেট সংলগ্ন ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকাটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনে গত এক বছরে প্রায় ₹১,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশ-বিরোধী নীতির ফলে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং পরে তাঁর দিল্লিতে আশ্রয়ের পর, ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসা ভিসাও বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি কলকাতার JN রে হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, তারা আর বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা করবে না। ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনও ঘোষণা করে, বাংলাদেশিরা তাদের হোটেলে থাকতে পারবেন না।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে কলকাতার ঐতিহাসিক নিউ মার্কেট ও আশেপাশের এলাকায়, যা বহু বছর ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো:
- হোটেল ও গেস্ট হাউজ
- রেস্তোরাঁ ও স্ট্রিট ফুড
- মানি এক্সচেঞ্জ ও ট্রাভেল এজেন্সি
- চিকিৎসা সহায়তা পরিষেবা
- গাড়ি ভাড়া ও পরিবহন
- গৃহভিত্তিক খাবার সরবরাহ, হোমস্টে এবং গাইড পরিষেবা
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান জানান, “এই এলাকায় প্রতিদিন ₹৩ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। নিউ মার্কেট ও বুররাবাজার যুক্ত করলে ক্ষতির পরিমাণ ₹৫,০০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।”
চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন:
- আগে প্রতিদিন একাধিক বাসে বাংলাদেশি পর্যটক আসতেন, এখন সপ্তাহেও কেউ আসে না।
- এক বছরেই ছোট ও মাঝারি ৪০% রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে।
- মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা প্রায় বন্ধ দশায়।
- অসংখ্য কর্মী বেকার—হোটেল কর্মচারী, ড্রাইভার, দোকান সহকারী ইত্যাদি।
- অনেকে ব্যাংক ঋণে পড়েছেন এবং EMI দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রাধুনি রেস্টুরেন্টের মালিক এনসি ভৌমিক জানান, “ব্যবসা ২০% এ নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকা সম্ভব নয়।”
একজন স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীর ভাই বলেন, “প্যান্ডেমিক পরবর্তী সময়ে আমরা ঋণ নিয়ে হোটেল সংস্কার করি। এখন কোনও পর্যটক আসে না, ভাইও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। EMI দিতে হিমশিম খাচ্ছি।”
সংকট কখন শেষ হবে কেউ জানে না, তবে স্থানীয়রা এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন—ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে আবার পুরনো রমরমা ফিরে আসবে।
