
বাংলাদেশে ২৭ মাস পর মুদ্রাস্ফীতির হার ৯% এর নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের জুন মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮%, যেখানে মে মাসে এই হার ছিল ৯.০৫%।
২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত টানা ৯ শতাংশের ওপরে ছিল মুদ্রাস্ফীতি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১.৬৬% রেকর্ড করা হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে।
BBS-এর তথ্য অনুযায়ী:
- খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি জুনে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৯%, যেখানে মে মাসে ছিল ৮.৫৯%
- অখাদ্য পণ্যের মুদ্রাস্ফীতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭%, যা মে মাসে ছিল ৯.৪২%
তবে সরকার যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৫% রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, সেটি পূরণ হয়নি। এই সময়ে গড় মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ১০.০৩%।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বছরওভার-বছরের ভিত্তিতে খাদ্য ও অখাদ্য—দুই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে মাসওভার-মাস চিত্রটি ভিন্ন বাস্তবতা দেখাচ্ছে।”
তিনি জানান:
- মে থেকে জুন মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ০.৫৭% বেড়েছে
- খাদ্যপণ্যে ০.৯৫% এবং অখাদ্য পণ্যে ০.২৭% দাম বেড়েছে
- বস্ত্র ও জুতা ০.১২%, বাসস্থান ও ইউটিলিটি ০.২৯%, গৃহস্থালি সামগ্রী ০.১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে
- কেবল পরিবহন খাতে কিছুটা মূল্য হ্রাস পেয়েছে
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখনই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মাসওভার-মাস যদি দাম কমতো, তাহলে সান্ত্বনার জায়গা থাকতো।”
জাহিদ হোসেন মুদ্রাস্ফীতির পতনের পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেন:
- অনুকূল আবহাওয়ায় কৃষি উৎপাদন ভালো হওয়া
- মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বের অধীনে কড়াকড়ি আর্থিক নীতি গ্রহণ
তিনি বলেন, “গত এপ্রিল, মে এবং জুনে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, যা মুদ্রানীতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে ইঙ্গিত দেয়।”
বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও উন্নত হয়েছে, তিনি যোগ করেন—“আগে প্রায়শই পেঁয়াজ বা কাঁচা মরিচের মতো নিত্যপণ্যে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যেত। নতুন সরকারের অধীনে গত কয়েক মাসে এমনটি হয়নি।”
তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে। জুনে মজুরি প্রবৃদ্ধি ৮.১৮%, যা মে মাসের ৮.২১% থেকে সামান্য কম। এর মানে, টানা ৪১ মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির নিচে রয়েছে।
গ্রামীণ ও নগর মুদ্রাস্ফীতির চিত্র:
- গ্রামীণ এলাকায় মুদ্রাস্ফীতি কমে হয়েছে ৮.৪৬% (মে মাসে ছিল ৯.০৫%)
- নগর এলাকায় কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৯৪% (মে মাসে ছিল ৯.৫০%)
জাহিদ হোসেন বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫-৬% লক্ষ্যের থেকে অনেক দূরে। সামনের মুদ্রানীতিতে দৃঢ় অবস্থান রাখতে হবে—এখন আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।”
