
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) প্রকাশিত ‘State of World Population Report 2025’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৭৭% নারী সন্তান নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই হার বৈশ্বিক গড় ৬৩ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।
এছাড়াও, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মাত্র ২৩% বাংলাদেশি নারী তাদের কাঙ্ক্ষিত সন্তানের সংখ্যা অর্জন করতে পেরেছেন, যা বৈশ্বিক গড় ৩৭% থেকে অনেকটাই কম।
প্রতিবেদনের নাম—“The Real Fertility Crisis: The Pursuit of Reproductive Agency in a Changing World”—এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃত সংকট হলো সংখ্যা নয়, বরং নারীর প্রজনন অধিকার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার ঘাটতি।
ঢাকার কাকরাইলে UNFPA বাংলাদেশ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে UNFPA প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং। তিনি বলেন, “এই সংকট কেবল স্বাস্থ্যগত নয়, এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত অগ্রগতির সঙ্গেও জড়িত।”
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়:
- ১১% নারী স্বতন্ত্রভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
- ১৬% নারীকে সন্তান নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
- ১৫% নারীকে চাইলেও সন্তান না নিতে বা গর্ভধারণ এড়াতে চাপ দেওয়া হয়েছে।
- ৩৩% নারী যৌন সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না।
- প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার।
এছাড়া, কিশোরী মাতৃত্ব এবং যৌন শিক্ষা ও গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার সীমিত প্রাপ্তির কারণে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে।
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে কামকং বলেন, “জাতীয় বাজেটের ২% এবং জিডিপির ০.৭% যা বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়, তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৫% ও ৫% করতে হবে।”
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭৫.৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। যদিও ৭% জনসংখ্যা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে—যা জনসংখ্যার বার্ধক্যকে নির্দেশ করে।
বিশ্বজুড়ে ‘ফার্টিলিটি প্যারাডক্স’ বা প্রজননবিষয়ক বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে—কোথাও জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে, কোথাও বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ চাইছে একটি স্থিতিশীল ও সম্মত পরিবেশে পরিবার গড়ে তুলতে।
